সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: নিজের কারণে সেনাবাহিনী বা সরকার যাতে বিব্রত বা বিতর্কিত না হয় সে বিষয়ে সচেতন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। গতকাল তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপ পরিচালিত এভিয়েশন বেসিক কোর্স-১১ এর গ্র্যাজুয়েশন সমাপনী ও ফ্লাইং ব্রেভেট প্রদান অনুষ্ঠান শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য শেষে সেনাপ্রধান সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায় ৮ মিনিট কথা বলেন। এ সময় তিনি কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন আল জাজিরার রিপোর্ট ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দেন। আল জাজিরার রিপোর্ট প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, এই নিয়ে অফিসিয়াল বক্তব্য আইএসপিআরের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমি নিশ্চিত যে- আপনারা জানেন, যে ধরনের অপচেষ্টাগুলো হচ্ছে এগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটা প্রতিষ্ঠান যেটা হলো জাতির গর্ব, দেশের গর্ব- সে প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তারা নানান ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। যাতে করে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। আপনাদেরকে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সেনাবাহিনী একটা অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং ওয়েলমোটিভেটেড একটি বাহিনী।
আগের থেকে অনেক বেশি সুসংহত। সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড অত্যন্ত ইফেক্টিভ এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে অতীতে এবং এখনো করছে।
তিনি বলেন, আমাদের চেইন অব কমান্ডে যারা আছে তারা সবাই এ ব্যাপারে সতর্ক আছি। আমি আশ্বাস দিতে চাই, সেনাবাহিনীতে এই ধরনের অপপ্রচার বিন্দুমাত্র আঁচ আনতে পারবে না আমাদের চেইন অব কমান্ডে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত্য এবং বাংলাদেশ সরকারের, বর্তমান সরকারের যেকোনো আদেশ- নির্দেশ পালনে সদা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ হোক, বহির্বিশ্বের হোক যেকোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমরা সাংবিধানিকভাবে শপথবদ্ধ। এ নিয়ে আমার মনে হয় দুশ্চিন্তা করার কিছুই নাই।
নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আল জাজিরার তথ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কথাটা বলা হয়েছে আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনার বিরুদ্ধে মামলা আছে, সাজা আছে কিন্তু আপনি যদি গতকাল সে সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকেন, আপনার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকে, আপনাকে কি তাহলে দোষী বলা যাবে আজকে? আপনাকে কি বলা যাবে আপনি সাজাপ্রাপ্ত? যদি আপনি কোনো অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান কোনো একটা চার্জ থেকে তাহলে পরদিন থেকে আপনি একজন মুক্ত নাগরিকের মতো। আমার ভাইদের সম্পর্কে যে অপপ্রচারগুলো এসেছে সেটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া আছে। খুব শিগগিরই আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে এ ব্যাপারে একটা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে। তবে এতটুকুই আমি আপনাদের বলতে পারি, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি, আমার অবস্থান, আমার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কি করলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, আমার যে দায়িত্ববোধ, আমাকে যে দায়িত্বটা দেয়া হয়েছে সেটা খর্ব হতে পারে- আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে মালয়েশিয়াতে যখন দেখা করেছি তখন তার নামে কোনো মামলা ছিল না। তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র মামলা যেটা ছিল সেটাতে সে অলরেডি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সে অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল, আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম। এখানে আল জাজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আমার যে চিত্র ধারণ করা হয়েছে-সেনাপ্রধান হিসেবে আমি মনে করি, আমি অফিশিয়াল ক্যাপাসিটিতে যেখানে থাকবো তখন আমার নিরাপত্তা অফিশিয়ালি নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। আমি যেখানে যাই হোস্ট কান্ট্রি সেটা করে থাকে। এবং সেখানে অতিরিক্ত কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কিন্তু যখন আমি আমার ব্যক্তিগত সফরে থাকি বা আসার সময় ট্রানজিটে আমার কোনো আত্মীয়স্বজনের কাছে যাই সেই সময় অফিশিয়াল প্রটোকল ব্যবহার করা সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি, সেটা অপচয় এবং সেটা আমার উচিত নয়। সেক্ষেত্রে সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি কিছু করে থাকে তাহলে সেটা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য। আমাদের এই রিজয়েন্ডার পাওয়ার পর আপনারা বুঝতে পারছেন যারা এই কাজগুলো করেছে- কেন করেছে আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কি হতে পারে।
কেন তাকে টার্গেট করা হয়- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার মনে হয় সেটার দায়িত্ব আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনারাই বুঝে নেন, খুঁজে নেন কেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন, সেনাপ্রধানকে হেয়প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয়প্রতিপন্ন করা। আপনাদেরকে এই জিনিসটা বুঝতে হবে। আমার কারণে যেনো কখনও আমার ইনস্টিটিউশন অর্থাৎ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমাদের সরকার যেনো কোনোভাবে বিব্রত না হয়, বিতর্কিত না হয় আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন। যা কিছু আপনারা শুনছেন সেগুলোর কোনো প্রমাণ নেই। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা বিভিন্ন কাটপিস সন্নিবেশিত করে তারা এগুলো করতেই পারে। তবে যে উদ্দেশ্যে করছেন তাদের সেই উদ্দেশ্য হাসিল হবে না। সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা ইতিমধ্যে আপনাদের কলমের মাধ্যমে তার জবাব দিয়েছেন। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা জড়িত তাদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হয়তো তেমন কিছুই করার থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে। তবে আমি নিশ্চিত সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যারা আছে বা সংস্থা আছে তারা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
Leave a Reply